Bengali report writing – (মৌলবাদ ও নারীর স্বাধীনতা)
Fundamentalism and women’s freedom |
মৌলবাদ ও নারীর স্বাধীনতা
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২৬শে জুন ২০২২:- টেলিভিশনের পর্দায় তালিবানি নৃশংসতা দেখতে দেখতে আতঙ্ক হয়। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এই বর্বরতা মেনে নেওয়া কঠিন। জাতিসংঘের নারী সংস্থা ‘ইউএন উইমেন’এর নির্বাহী পরিচালক কুমজিলে স্নামবো এনচুকা-ও মনে করেন,আফগানিস্তানের নারীরা শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। বৈষম্যমূলক সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এর মূল কারণ। তাঁর মতে, ৮০ শতাংশ আফগান নারী সহিংসতার শিকার। সহিংসতা বলতে শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে সব ধরনের দমনমূলক কর্মকাণ্ডই বোঝায়। ইদানীং উচ্চপদস্থ নারী-সরকারি কর্মচারীদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। যুবতী নারীরা ঘরের পুরুষ-স্বামী, ভাই বা ছেলেকে ছাড়া বাইরে বের হতে পারবেন না।
কাবুলে গুলিতে আহত হয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নারী অধিকার কর্মী ফাউজিয়া কুফি। তালিবানের কট্টর সমালোচক ফাউজিয়ার ডান হাতে গুলি করা হয়। সংবাদ মাধ্যমের খবর, মাথা ঢাকা না দেওয়ায় কাবুলে গুলি করা হয়েছে এক মহিলাকে। প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করা হয়েছে মহিলাদের। এই তালিবানকেই এক সময় সোভিয়েট ইউনিয়নের আধিপত্য খর্ব করতে আমেরিকা ব্যবহার করেছে, অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থ দিয়ে দিনের পর দিন সাহায্য করেছে। আজ তালিবানি অত্যাচার দেখেও চিনের মতো কমিউনিস্ট দেশ চুপচাপ বসে আছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ন্যায়নীতির প্রশ্নটা বড় নয়, মূল বিষয় হল ক্ষমতা পাওয়া। সমাজমাধ্যমে কারও কারও মধ্যে আবার তালিবানি বর্বরতা দেখে পুরো একটা ধর্মীয় সম্প্রদায়কেই দোষ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদ, সে যে ধর্মেরই হোক না কেন, খারাপ। এক জায়গায় ধর্মীয় মৌলবাদের উদ্ভব হলে বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত হয়। সেই রকম, আফগানিস্তানে নারীদের যেভাবে দমন করা হচ্ছে, সেটা দেখে অন্যান্য ধর্মের মাতব্বররা লতে শুরু করেছে, আমরা এর থেকে অনেক বেশি স্বাধীনতা দিই নারীদের। যেন স্বাধীনতার প্রশ্নে পুরুষ ও নারীদের অবস্থান দাতা ও গ্রহীতার। পুরুষ যতটা দেয়, নারী ততটাই স্বাধীনতা অর্জন করবে, এটাই যেন নিয়ম। এই ধারণা যত দিন থেকে যাবে, তত দিন নারীকে ‘স্বাধীন’ বলা যাবে না। ‘পুরুষ স্বাধীনতা’ কথাটা শুনেছে কেউ? কারণ, পুরুষরা জন্মগত ভাবেই স্বাধীন। আজ তালিবানরা নারীদের ব্যাপারে যে নরম নীতির কথা বলছে, এটা পুরোপুরিই ভেক। মৌলবাদের কখনও আধুনিক-প্রাচীন হয় না। তাদের ক্ষেত্রে একটা কথাই প্রাসঙ্গিক, সেটা হল ‘বিপজ্জনক’। তালিবানরা আরও অধিক মাত্রায় নারীদের অত্যাচারের পন্থা বার করবে। সেটাই দুশ্চিন্তা ও ভাবনার বিষয় নতুন প্রজন্মের কাছে ।