Impact of child abuse in India – ভারতে শিশু নিগ্রহের প্রভাব
Impact of child abuse in India – ভারতে শিশু নিগ্রহের প্রভাব |
ভারতে শিশু নিগ্রহ
ভারত সরকারের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় (শিশু নিগ্রহ সম্পর্কে সমীক্ষা : ভারত 2007) দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের নিগ্রহের শিকার শিশুরা, তার মধ্যে নিগৃহীত ও শোষিত হওয়ার ঝুঁকি 5 থেকে 12 বছরের শিশুদের সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে শারীরিক, যৌন এমনকী মানসিক নিগ্রহও রয়েছে। ভারতে 2015 সালে নিপীড়িত হয় দশ হাজারেরও বেশি শিশু। ভারত সরকারের এক জরিপে অংশ নেওয়া 53.22 শতাংশ শিশু বলেছে, তারা কোনো না কোনো ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। 50 শতাংশ ক্ষেত্রেই যৌন নির্যাতনকারীরা শিশুদের পূর্বপরিচিত বা এমন কেউ যাদেরকে তারা বিশ্বাস করে। নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের সাম্প্রতিক কালের (2020) তথ্য অনুযায়ী ভারতবর্ষে শিশু নির্যাতনের চিত্র হল :
যৌন নিগ্রহ :
*53.22 শতাংশ শিশু এক বা একাধিক প্রকারের যৌন নিগ্রহের শিকার বলে জানিয়েছে।
*যৌন নিগ্রহের শতকরা হার অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, বিহার এবং দিল্লিতে সর্বোচ্চ।
* ভারতে প্রতি 15 মিনিটে একটি শিশুকে যৌন নিগ্রহ করা হচ্ছে বলে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্রাই’ (Child Rights and You) জানিয়েছে।
* 18 শতাংশ শুধু উত্তরপ্রদেশেই। পশ্চিমবঙ্গে শিশু সুরক্ষা কমিশনের মতে, শিশু নিগ্রহ আগেও হত। কিন্তু বিষয়গুলি সামনে আসত না। বাবা-মা, অভিভাবক সামাজিক লজ্জা-অপমানের ভয়ে বিষয়গুলিকে লুকিয়ে রাখতেন। এখন দিন বদলেছে।
শারীরিক নিগ্রহ :
*প্রায় 69 শতাংশ শিশু কোনো না কোনো ধরনের শারীরিক নিগ্রহের শিকার।
*যে 69 শতাংশ শিশু শারীরিক ভাবে নিগ্রহের শিকার তাদের মধ্যে 54.68 শতাংশ ছেলে |
*পরিবারের মধ্যেই যে সকল শিশু শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হয়, তাদের মধ্যে ৪8.6 শতাংশ তাদের বাবা মায়ের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, বিহার এবং দিল্লিতে সব রকমের শারীরিক নিগ্রহের হার অনেক বেশি।
*সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে 50.2 শতাংশ শিশু সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করে।
শিশুশ্রমিক :
* 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী, ভারতবর্ষের শিশুশ্রমিকের সংখ্যা (6-14 বছর) 43.53 লক্ষ।
* শিশু শ্রম (নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন 1986 অনুসারে 14 বছরের নীচের শিশুদের কোনো বিপজ্জনক কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ এবং বিপজ্জনক কাজ নয় এমন কোনো কাজে নিয়োগ নিয়ন্ত্রিত। মূলত কারখানা, চা-বাগান, খনি, বিড়ি ও সিগারেট কর্মী, হোটেল, দোকান ইত্যাদি ক্ষেত্রে এরা নিযুক্ত।
শিশু পাচার :
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, 2019 সালে 9472টি শিশু নিখোঁজ হয়েছে। ভারতে প্রতি ৪ মিনিটে একটি শিশু নিখোঁজ হয় (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো, 2018)। এই তথ্যগুলি হিমশৈলের চূড়া বলেই বিবেচিত হবে, কারণ অসংখ্য ঘটনাই কোথাও নথিভুক্ত হয় না।
শিশুদের উপর নিপীড়নের প্রভাব :
শিশুদের উপর নিপীড়নের প্রভাব দু-ধরনের হতে পারে। স্বল্পকালীন এবং দীর্ঘকালীন।
* শারীরিক ক্ষত যেমন ছড়ে যাওয়া, কামড়ানো, কেটে যাওয়া ইত্যাদি, যৌনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ এবং অন্যান্য শারীরিক আঘাত।
* কখনও কখনও শিশুরা ভয় পায়, অপরাধবোধে, অবসাদে ভোগে, নিজেদের দোষী ভাবে এবং ধীরে ধীরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক সময় শিশুই পরিণত বয়সে পৌঁছে নানা সমস্যায় পড়ে এবং ঘন ঘন যৌনক্রিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
*নির্যাতনের ফলে শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, চরিত্রহীনতা এমনকি অপরাধ প্রবনতা বাড়ে। অনেকক্ষেত্রে সমাজবিরোধী বা জঙ্গী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে।
যে কোনো অবস্থাতেই বড়দের থেকে শিশুরাই সবথেকে বেশি অসুরক্ষিত। তাই, শিশুরাই সরকার ও সমাজের কোনো সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার শিকার বেশি হয়। আমাদের দেশের আইন এবং যে সব আন্তর্জাতিক আইনকে আমরা মান্যতা দিয়েছি, সে সব আইনে শিশুদের যেসব অধিকার দেওয়া হয়েছে, 18 বছরের নীচে সব বালক বালিকার সেগুলো পাওয়ার অধিকারী। আর তা যদি না করা যায়, তাহলে আমরা আজকের শিশুকে আগামী দিনের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারব না। শিশু সুরক্ষা কমিশনের মতে, ‘বাবা-মায়েরা এ বিষয়ে সচেতন থাকুন। সন্তানকে বিশ্বাস করুন। সন্তান কিছু বললে চুপ করিয়ে দেবেন না। মন দিয়ে শুনুন,এবং তাদেরকে তাদের মতন করে বাঁচতে দিন |
file type: pdf
download link: click here