কুমারী কন্দম দেশটি হারালো কিভাবে ?
বন্ধুরা ‘Marseille’,’Alexandria’ এবং ‘Istanbul’ এরা আজ দুনিয়ার বড় বড় শহর। কিন্তু ‘UNESCO’ অর্থাৎ‘United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization’এর মতে আগামী 30 বছরের মধ্যে এই শহর গুলি সমুদ্রের মধ্যে তলিয়ে যাবে। শুধু তাই নয় পুরো দুনিয়ার একুশটি দেশের চল্লিশেরও বেশি সহর সমুদ্রের তলায় হবে আর ওখানকার জনজীবন ইতিহাস হয়ে যাবে আর এর প্রধান কারণ হলো ‘Global Warming’। পৃথিবীর ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মেরু অঞ্চলে জমা বড় তরল জলে পরিণত হচ্ছে এবং সমুদ্রের জল স্তর ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতি কি পৃথিবীর মানুষ প্রথমবার দেখছে! তো বন্ধুরা এর উত্তর হল একদম না। ‘5th Century BC’ র গ্রিক দার্শনিক ‘Plato’ তার লেখা বইয়ে এক দ্বীপপুঞ্জের সম্বন্ধে লিখেছেন,যার নাম তিনি‘Atlantis’ বলেছেন। যা প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে এক মহাদ্বীপপুঞ্জ। ‘Atlantis’ মহাদ্বীপপুঞ্জোতে বাস করা অধিবাসিরা অনেক আধুনিক ছিল। কিন্তু একদিন এটাহঠাৎ ‘Atlantis’ জলের মধ্যে তলিয়ে যায় এবং সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। আর ঠিক এমনই এক রহস্যময়,হারানো মহাদেশের ব্যাপারে আমরা তামিল সাহিত্যর থেকেও পাই, যাকে ‘Kumari Kandam’ নাম দেওয়া হয়েছে। বন্ধুরা ‘Cilappatikaram’ যা তামিল সাহিত্যের পাঁচ মহাকাব্বর মধ্যে একটা। ‘Cilappatikaram’ মধ্যে একটা হারানো মহাদ্বীপের ব্যাপারে বলা হয়েছে।’2nd Century AD’ তে লেখা এই বই অনুযায়ী ‘Pandya Rulers’ দের এই রাজ্য সমুদ্রের মধ্যে তলিয়ে যায়। এরমধ্যে ‘Pahruli’ এবং ‘Kumari’ নামের দুটো নদীর সম্পর্ক বর্ণনা আছে। হয়তো এই দুটো নদী হারানো মহাদ্বীপপুঞ্জ ‘Kumari Kandam’এ বৈত। প্রাচীন তামিল কবি ও পন্ডিত ‘Adiyarkkunallar’ বলেছেন, আজকের কন্যাকুমারীর দক্ষিণ দিকে এক মহাদ্বীপ অবস্থিত ছিল যার দৈর্ঘ্য ‘700 Kavatam’ বলা হয়েছে। কিন্তু বন্ধুরা এখন এই ‘Kavatam’ আবার কি জিনিস!
’15th Century AD’তে লেখা বই ‘Kanakkathikaram’ মধ্যে আমরা ‘Kavatam’ কথার উত্তর খুঁজে পেয়েছি।
‘Kanakkathikaram’ বই অনুযায়ী ‘1 Kavatam’ আমাদের আধুনিক যুগের 10.06 কিলোমিটারের সমান। অর্থাৎ ‘Kumari Kandam’ এর আয়তন –700 Kavatam × 10.06km = 7041 km।‘Bhagavad Purana’এ ‘Mayan’ নামক এক সাধুর বর্ণনা আছে। যে ‘Aintiram’ নামক এক বই লেখেন এবং উনি ‘Kumari’ নদীর পাশে হওয়ার তামিল সঙ্গম-এর অংশও ছিলেন। বন্ধুরা ‘সঙ্গম’ এমন ঘটনাকে বলা হয় যেখানে বিভিন্ন রাজ্যের রাজা কিংবা সেখানকার প্রধানরা একত্রিত হয়ে কোন বিষয়ের ওপর চর্চা করে। এমনও বলা হয় ‘Kumari Kandam’এ তিনবার তামিল সঙ্গম হয়েছিল। যদিও বন্ধুরা সেই সব বইয়ে এই হারানো মহাদীপপুঞ্জকে কোথাও ‘Kumari Kandam’ নামে বলা হয়নি। আসলে একে তামিল লোকেদের রাজ্য কিংবা পান্ডিয়া শাসনের রাজ্য বলা হয়েছে। ‘Kumari Kandam’ এই নাম প্রথম উচ্চারণ করা হয়েছিল 15 শতাব্দীর বই ‘Kanda Puranam’ এ যা সংস্কৃত তে লেখা ‘Skanda Purana’এর তামিল ভার্সন ছিল। একে ‘Kumari Nadu’ বা ‘Kumari Kandam’ বলা হয়েছে। বলা হয় এখানে ‘Paratan’ নামের এক রাজা ছিল যার মেয়ের নাম ছিল ‘Kumari’আর মনে হয় এখান থেকেই ‘Kumari Kandam’ নামটা পড়েছে। আরো একটা থিউরি বলে যে এখান থেকে ‘Kumari’ নামের নদী বৈত, যার কারনে এর এই নাম এসেছে।
আধুনিক মানুষরা ‘Kumari Kandam’ সম্পর্কে কিভাবে জানতে পারে–
1864 সালে যখন ‘Philip Sclater’ একটা বই সারাবিশ্বের সামনে আনে, যার নাম ‘Mammals of Madagascar’। ‘Philip Sclater’ লক্ষ্য করেন মাদাগাস্কার এবং ভারতের জীবজন্তুর মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে,যেমন-‘Lemur’ যা মাদাগাস্কারএ পাওয়া যায় তা আফ্রিকার অন্য অঞ্চলে খুব বেশি পাওয়া যায় না কিন্তু এই জীব ভারতে খুব পরিমাণে অবস্থিত আছে। যদি এইসব জীব আফ্রিকা থেকে ভারতে না আসে তাহলে এই সব জীব গুলো আমাদের দেশ পর্যন্ত পৌঁছালো কি করে। আর শুধু ভারতে নয় অস্ট্রেলিয়ার সাথেও এই সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায় যেখানে ‘Lemur’ এর একশোর ও বেশি প্রজাতি আছে। কিন্তু মাদাগাস্কারএ তো অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক দূরে অবস্থিত একটা দ্বীপ। তাহলে ভারত মাদাগাস্কারএ এবং অস্ট্রেলিয়াকে একসাথে কে একত্রিত করছে। তো বন্ধুরা এই রহস্য সমাধান করে ‘Lemuria’ যাকে এক হারানো মহাদেশ রূপে ভাবা হয়। এমন মনে করা হলো যে ভারত মহাসাগরে উপস্থিত এই বিশাল মহাদেশ ভারতের কন্যাকুমারী থেকে মাদাগাস্কার আরো অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ছড়ানো ছিল। শ্রীলঙ্কাও মনে হয় এই মহাদেশেরই এক ছোট অংশ ছিল। ‘Lemuria’ অপুর পরীক্ষা করতে করতে যখন ব্রিটিশ খোঁজ কর্তারা তামিলনাড়ুতে পৌঁছায় তখন ওখানকার অনেক আদিবাসী লোক কথায় উনারা এক হারানো মহাদেশের খোঁজ পায়। অনেক বছর ধরে তামিলনাড়ুর লোক এই কথা কে মিথ্যে বলে মনে করত কিন্তু এই ঘটনার পরে তামিল ঐতিহাসিক বিজ্ঞানীদের ঘুম ভাঙ্গে আর তারা‘Lemuria’ আর ‘Kumari Kandam’এর মাঝখানে মিল খুজতে শুরু করে। তামিম ইতিহাস অনুযায়ী ‘Kumari Kandam’এ পান্ডিয়া রাজারা এগারোহাজার বছর ধরে শাসন চালায়। যেমন আমি প্রথমে বলেছিলাম এখানে তিনটে তামিল সঙ্গম ও হয়েছিল। এখানে প্রথম তামিল সঙ্গম 9000 BC হয় অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় এগারো হাজার বছর আগে। এই সঙ্গম ‘Madurai’ শহরে হয় যা‘Kumari Kandam’এর প্রধান শহর ছিল। বন্ধুরা আমি এখানে প্রথমে পরিষ্কার করে দিতে চাই যে এই ‘Madurai’ আজকের তামিলনাড়ুর ‘Madurai’ শহর না‘Kumari Kandam’কে মোট উনোপঞ্চাশ ভাগে ভাগ করা হয়েছিল যার মধ্যে সাতটা অংশ ‘Madurai’এর ছিল আর এই সাতটা ভাগের মধ্যে যেকোনো একটা ভাব ‘Kumari Kandam’এর প্রধান শহর ছিল।
বলা হয় প্রথম তামিল সঙ্গমএ 4449 টি কবিরা অংশগ্রহণ করেছিল। আর বলাহয় ‘Kubera’,’Murugan’ এবং ‘Siva’ ও এতে অংশগ্রহণ করে। সঙ্গম এক কিংবা দুদিনের ছোটখাটো উৎসব ছিল না বরং এইসব কয়েক দশক ধরে চলতো। প্রথম সঙ্গম 4440 বছর ধরে চলে যার মধ্যে 89 টি পান্ডেয়ান রাজারা শাসন করে। এইসব বিষয়ে বন্ধুরা তামিলের একটি বই ‘Iraiyanar Akapporul’এ লেখা আছে। বন্ধুরা আমরা যখন ‘Plato’র বলা ‘Atlantis’ শহরের কথা বলি তাহলে এই হারানোর শহরের অস্তিত্বের প্রমাণ কোথাও পায়না কিন্তু ‘Kumari Kandam’এর অস্তিত্বের প্রমাণ আমরা তামিল সংস্কৃতির অনেক বইয়ের মধ্যে দেখতে পাই, এমনকি
‘Matsya Purana’ এবং ‘Garuda Purana’এ তামিল লোকেদের হারানো দেশের ব্যাপারে জানা যায় শুধু তাই নয় চীন এবং গ্রীক সাহিত্যর মধ্যে ওই হারানো মহাদেশের অনেক তথ্য লেখা আছে। চীনের সাহিত্যের মধ্যে বলা হয়েছে, এই মহাদেশে ‘Meru’ নামক এক পর্বত অবস্থিত ছিল যার মধ্যে দিয়ে ‘Kumari’,’Peru’ এবং ‘Pahruli’ নদী প্রবাহিত হতো।
এমনকি এই জায়গায় অনেক বড় বড় সোনার খনিও ছিল। পান্ডিয়ান রাজারা এই সোনার খনিতে কাজ করানোর জন্য চীন থেকে কর্মচারীদেরও আনতো। ‘Maryan Empire’এর সময় ভারতে আসা ‘Megasthenes’ তার লেখা বই ‘Indica’তে ‘Taprobane’এর উল্লেখ করে, যা শ্রীলঙ্কার পুরনো নাম। ‘Megasthenes’ বলেছিলেন, ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে ‘Porunai’ নামক এক নদী আলাদা করে। এই নদীকে ‘Thamirabarani’ নদী নামে সবাই চিনত যা তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। আজ এই নদী ভারত মহাসাগরে গিয়ে মেশে। এবার এমনও হতে পারে যে একসময় এই নদী ভারত এবং শ্রীলংকার মাঝখান দিয়ে বইত। ‘INIO’ অর্থাৎ ‘Indian National Institute of Oceanography’র এক রিপোর্ট বলে, ভারত এবং শ্রীলংকার মাঝখানে সমুদ্রের জল স্তর আজ থেকে পনেরোহাজার বছর আগে একশো মিটার নিচে ছিল।
রামায়ণকালে তৈরি হওয়া ‘রাম সেতু’ জলেশ্বর বাড়ার কারণে জলে নিচে তলিয়ে গেছে। আর তার প্রমাণও আজকে আমরা দেখতে পাই। এমনকি ‘NASA’ও রাম সেতুর অস্তিত্বকে প্রমাণ করেছে। বন্ধুরা, রাবণ যে এক মহাযোদ্ধা ছিল, আপনাদের মনে হয় ওর রাজ্য আজকের ছোট শ্রীলংকার সমান ছিল! কিছু প্রাচীন লিপি এটাও বলে যে, রাবণের আসল লঙ্কার একটা বড় অংশ জলের মধ্যে তলিয়ে গেছিল। বন্ধুরা এমনও তো হতে পারে আজকের এই শ্রীলংকা ‘Kumari Kandam’এর একটা ছোট মাত্র অংশ যা এখনো জলের ওপরে অবস্থিত আছে। বন্ধুরা এটা শুধুমাত্র একটা কল্পনা। ইংলিশ জোওলোজিস্ট ‘Alfred Russell’ এবং জার্মান ন্যাচারালিস্ট ‘Ernst Haeckel’
sss