জীবন বিজ্ঞানের অভিযোজন সম্পর্কে আমরা জানবো অনেক অজানা তথ্য। প্রথমেই আমরা জানবো অভিযোজন কাকে বলে? অভিযোজন বা আচরণ এই দুটো কথার মানে তোমাদের আগে ভালোভাবে জানতে হবে ।
আমাদের আচরণ বা বিহেভিয়ার কাকে বলে ?
আমরা যা কিছু করি সেটাই আমাদের আচরণ। আমরা খাচ্ছি ঘুমাচ্ছি আমাদের বংশ ভিত্তিক হচ্ছে আমরা যে কোন জায়গায় হোক বা কোথাও যাচ্ছি,কেউ শিকারির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি এই সব কিছুই হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন ধরনের আচরণ। তাহলে বোঝা গেল আচরণ হল এমন একটা ঘটনা যা আমাদের বাইরের পরিবেশ থেকে বা অভ্যন্তরীণ কোন ক্রিয়ার জন্য আমরা করে থাকি যেমন – বাইরের পরিবেশের আলো হতে পারে শ্রবন হতে পারে বা কোন গন্ধ হতে পারে এই ক্রিয়াগুলোর প্রতিক্রিয়াতে আমরা যে আচরণগুলো আমরা ভেতর থেকে বাইরে প্রকাশ করে থাকি সেটাই হলো প্রত্যেকটা ব্যক্তির আচরণ বা বিহেভিয়ার। এবার আচরন বা বিহেভিয়ার টা আমাদের অভিযোজনের ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
অভিযোজন কাকে বলে?
অভিযোজন বা এডাপটেশন এডাপ্ট করে নেওয়া কথাটার অর্থ হলো মানিয়ে নেওয়া। যেমন ধরো পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে নানা রকমের চেঞ্জ হতে শুরু হয়েছে। ঠিক যেমন বহু কোটি বছর আগের পৃথিবী আর এখনকার পৃথিবীর যেমন অনেক পার্থক্য অনেক ধরনের প্রকৃতির মধ্যে চেঞ্জ এসেছে। তাহলে ধরুন এই পৃথিবীতে কোন একটা জীবকে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হয় তাহলে কি করতে হবে সেই জিবটিকে যে বারবার পরিবর্তন হচ্ছে এই পৃথিবীতে এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সেই জীবটিকে পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে হবে বা মানিয়ে নিতে হবে। তাকে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে সব সময়।এই যে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এটাকেই আমরা বলব অভিযোজন অর্থাৎ পরিবেশের চেঞ্জ এর সাথে বা পরিবর্তনের সাথে কি কি ভাবে আমরা মানিয়ে নিতে পারি। তিন রকম ভাবে আমরা মানিয়ে নিতে পারি।
- অঙ্গসংস্থান গত ভাবে বা গঠনগত ভাবে মানিয়ে নিতে পারি।
- শারীরবৃত্তিও ভাবে মানিয়ে নিতে পারি |
- আচরণগতভাবে মানিয়ে নিতে পারি।
এই তিন রকম ভাবে মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে টিকে থাকার বা বংশবৃদ্ধি করার এই যে প্রসেসটা এটাকেই আমরা বলব অভিযোজন। এই যে তিনটে টান আমি তোমাদেরকে বললাম এবার তোমরা আসলে বুঝতেই পেরেছো অভিযোজন কথার অর্থ হলো প্রকৃতির সাথে বা পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার একটা ক্ষমতা মাত্র। তা না হলে পৃথিবীতে বহু প্রাণীর মতো যেমন ডাইনোসরের মতন অবলুপ্ত হয়ে যেতে হবে। আমাদের এই পৃথিবীতে এমন অনেক জীব রয়েছে যেগুলো পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে রয়েছে তাদের সম্পর্কে আজ আমরা জানব।
প্রথমে জানব :-
অঙ্গসংস্থান গত ভাবে বা গঠনগতভাবে কিভাবে মানিয়ে নেওয়া যায় :-
তোমার শরীরে এমন কিছু চেঞ্জ হচ্ছে, তোমার শরীরের অঙ্গ গুলির মধ্যে এমন কিছু চেঞ্জ হচ্ছে যাতে তুমি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারো বা বংশবৃদ্ধি করে যেতে পারো এই পৃথিবীতে। তাহলে তোমার শরীরের যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সেগুলো পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছে বলেই তুমি এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে পারছ। সেটা কিভাবে আমরা উদাহরণের সঙ্গে জানব – ক্যাকটাস, এই ক্যাকটাস উদ্ভিদ অনেকেই তোমরা বাড়িতে দেখেছ কিংবা যারা মরুভূমিতে বেড়াতে গেছে তারা তো অবশ্যই দেখেছো। ক্যাকটাস নরমাল গাছের মতন দেখতে হয় না। ওদের গায়ে প্রচুর কাঁটা দেখা যায় এবার তোমার মনে হতে পারে এই কাঁটা গুলি আসলে কি?
এই কাঁটাগুলো হলো একচুয়ালি তাদের পরিবর্তিত পাতা। গাছের স্বাভাবিক পাতা যেমন লম্বা চ্যাপ্টা এবং বড় হয় কিন্তু ক্যাকটাসের পাতা কাটায় পরিণত হয়ে যায়। কারণ দেখো পাতা যদি স্বাভাবিক গাছের মতন হতো তাহলে এটা তো সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলের গাছ তাহলে সাধারণ গাছের মতন পাতা হলে প্রচুর জলের প্রয়োজন হতো বাষ্পমোচন এর সাহায্যে জল বেরিয়ে যেত কিন্তু মরুভূমি এলাকায় জলের খুব সংকট সেই কারণেই কাটাতে সংকুচিত করে জাস্ট ছোট্ট একটা মাধ্যম দিয়ে দেখানো হয়েছে বা বোঝানো হয়েছে যাতে করে এই গাছের বাষ্পমোচন কম হয় এবং জলও এই গাছের কম লাগে। জলকে একদম নষ্ট করা যাবে না ঠিক এই কারণেই ক্যাকটাসের পাতা কাটায় পরিণত হয়ে যায়। এর ফলে বাষ্পমোচন এর হার একেবারেই কমে গেছে । এর ফলে জলকে সংরক্ষণ করছে। আর ক্যাকটাস গাছের কান্ড আমাদের সাধারণ স্বাভাবিক গাছের কাণ্ডের মতন সোজা নয়। এর কান্ডটি হচ্ছে ব্যাকা, পাতার মতন। সুতরাং দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে যে একা পাতা কাটাই পরিবর্তন হয়েছে এবং কান্ড পাতায় রূপান্তরিত হয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গোল হয়ে সার্কেল আকারে ঘুরতে থাকে। একে আমরা বলি কর্ণ কান্ড। এই হলো আমাদের অঙ্গসংস্থান গত অভিযোজন এর ক্ষমতা।
শারীরবৃত্তিও ভাবে অভিযোজন কিভাবে মানিয়ে নেওয়া যায় ?
এতক্ষণ আমরা জানলাম কিভাবে অঙ্গসংস্থান গত ভাবে কিভাবে অভিযোজন করা যায়। বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে চেঞ্জ হচ্ছিল। যখন এটা অঙ্গ সংস্থান্গত ভাবে না থেকে শারীরবৃত্তি ওভাবে চলে আসবে তখন সেটা হবে শারীরবৃত্তি ও অভিযোজন।এবার আমরা জানব শারীরবৃত্তিও ভাবে কিভাবে অভিযোজন করে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া যায়। প্রথমেই আমরা জানবো এই শাড়ির ভিত্তি অভিযোজন টা সুন্দরী গাছের শ্বাসমূলের ক্ষেত্রে কিভাবে হয়। এই সুন্দরী গাছ আমরা কোথায় পাই সুন্দরবনের মাটিতে আর সুন্দরবনের মাটি খুব লবণাক্ত। ওখানে জল প্রচুর লবণাক্ত তাই মাটিও খুব লবণাক্ত। যেখানে মাটি লবণাক্ত সেখানকার কোন গাছ যদি মূল মাটির নিচে বেশি চলে যায় তাও কোন লাভ নেই জল লবণাক্তই পাওয়া যাবে। তাই সুন্দরী গাছের কিছু কিছু মূল মাটির নিচে খুব গভীরে যেয়ে আবার উল্টোদিকে ঘুরে মাটির উপরে চলে আসে। তাই এই মূল পৃথিবীর গাভিটি পাওয়ার এর বিপরীত দিকে উঠে আসে এই যে সুন্দরী গাছের মূল গুলো মাটির নিচে চলে যাওয়ার পরেও আবার উপরের দিকে উঠে আসে তার কারণ হলো সেই মূল গুলোর গায়ে বহু ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। এই মূল গুলোকে বলি শ্বাসমূল। এই মূল যতই মাটির নিচে যাক লবনাক্ত বলে কোন লাভ হয় না সেটা মাটির উপরেই ফিরে আসে যেহেতু যাওয়া আর মাটির নিচে গভীরে প্রবেশ করার কোন মূল্যই থাকে না। সেহেতু ও মাটির নিচ থেকে যে জল শোষণ করে সেই জলটির পুরো লবণাক্ত জল এই লবণাক্ত জল তো ওর কোন কাজে লাগবে না যেহেতু ও সেই লবনাক্ত জিনিসগুলোকে বাকল বা পত্রের মাধ্যমে জমিয়ে রাখে তারপরে পত্র মোচন হয় বা পাগল মোচনের সাথে সেই লবণগুলো বেরিয়ে যায়। তাহলে ভাবুন যে এই সুন্দরী গাছ কিভাবে ওই লবণাক্ত মাটিতে ও নিজেকে মানিয়ে নিয়ে দিব্যি থাকছে। সুন্দরী গাছকে আমরা হলফাইডওয়ালি কারণ হলফাইড কথার অর্থ হলো লবণাক্ত। আর ক্যাকটাস গাছের ডেজার্ট মরুভূমিতে হয় বলে ডেজার্ট কথার অর্থ হলো মরুভূমি তাই মরুভূমির গাছ বলা হয়। এটা হল আমাদের শারীরবৃত্তিও ভাবে অভিযোজনের ক্ষমতা।
আচরণগতভাবে অভিযোজন কিভাবে হয় ?
আচরণগত পরিবর্তন আমরা এটা প্রাণীর মাধ্যমে জানবো যে কিভাবে হয় সেই প্রাণীটি হলো শিল্পাঞ্জি। শিম্পাঞ্জির মাধ্যমে আমরা জেনে নেব যে, শিম্পাঞ্জি হলো খুব বুদ্ধিমান প্রাণী এই প্রাণীটি কিভাবে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে সেটা জানলে আপনারা অবাক হবেন। শিল্পাঞ্জিরা উই খেতে খুব ভালোবাসে তারা গাছের একটি ডাল কে উই এর ডিপির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় তার ফলে ওই লাঠির আঘাত পেয়ে উই এর ডিপি থেকে উইপোকাগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে তারপর সেই লাঠিটিকে টেনে বাইরে বের করে নিয়ে আসবে এবং উই গুলোকে সব খেয়ে নেবে। তাহলে দেখো এই শিল্পাঞ্জির বুদ্ধি কিরকম পুরো টিভিটাকে নষ্ট করলে প্রচুর পরিশ্রম হবে ওরা সামান্য একটা লাঠিপের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় তাই সেই আঘাতে ওই ডিপি থেকে উই পোকা বাইরে বেরিয়ে আসে। এটা হল ওই উই পোকার আচরণগত অভিযোজন। এটাই হলো শিল্পাঞ্জির আচরণগত অভিযোজন এর ক্ষমতা এই আচরণগত অভিযোজনের ক্ষমতায় তারা এই পরিবেশের সাথে কিভাবে কষ্ট করে ভাবে মানিয়ে চলেছে।